Edit Content

দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও দুর্বলতা মোকাবিলায় যুব-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ

Share the News

মৃণাল কে. সরকার

বাংলাদেশকে এশিয়া মহাদেশের ডেল্টা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২১টি উপকূলীয় জেলা, যার মধ্যে সাতক্ষীরা অন্যতম। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় যুবনীতি ২০১৬ অনুযায়ী, ১৮-৩৫ বছর বয়সী সকল নাগরিককে যুবক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৫২ মিলিয়ন মানুষ যুবক। এই যুবসমাজ বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও দুর্বলতা মোকাবিলায়। সংখ্যা তত্ত্ব অনুযায়ী এটিকে জনমিতিক লভ্যাংশ বলা হয়। তবে, আমাদের যুবসমাজ এখনো বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার। তারা রাজনীতিতে সীমিত অংশগ্রহণ, দারিদ্র্য, মানসম্মত শিক্ষার অভাব, পর্যাপ্ত সম্পদ ও স্বাস্থ্য সেবা সুবিধার অভাবের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। সাতক্ষীরা জেলার যুবসমাজ, বিশেষ করে প্রান্তিক যুব মহিলারা, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে পারবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন করবে।

সাতক্ষীরা জেলার প্রেক্ষাপট

সাতক্ষীরা একটি দক্ষিণ-পশ্চিম উপ-ক্রান্তীয় জেলা, যেখানে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগের প্রভাব স্পষ্ট। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। সিডর, আইলা, আম্ফান, ইয়াসের মতো দুর্যোগ এর সরাসরি উদাহরণ। এসব দুর্যোগ মানুষের জীবন ও সম্পদে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, নদী ভাঙন, বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো সমস্যাগুলি সাতক্ষীরা জেলার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরও প্রকট করেছে। এর ফলে কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, অবকাঠামো, পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে, অভিবাসনের হার বাড়ছে এবং শহরাঞ্চলে নতুন বস্তি গঠিত হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭৩% মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখে না। মাত্র ১৯% মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন। লবণাক্ত পানির কারণে মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা স্বাস্থ্য, কৃষি ও দৈনন্দিন জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

সমাধানের প্রস্তাবনা

এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় নিচের উদ্যোগগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:

  1. দুর্যোগকালে মানুষের আশ্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন।
  2. জনসাধারণকে দ্রুত বন্যার পূর্বাভাস সরবরাহ।
  3. যুবকদের জলবায়ু সহনশীল প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন।
  4. লবণাক্ততা সহনশীল ফসল, মাছ ও প্রাণিসম্পদ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ।
  5. জলাবদ্ধতা দূর করতে নদী খনন এবং পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ।
  6. জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কর্মসূচি আয়োজন।
  7. শিক্ষার্থীদের জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন করা।
  8. স্থানীয় সরকার বাজেটে যুব উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশেষ বরাদ্দ রাখা।
  9. লবণাক্ত এলাকায় ব্যাগ পদ্ধতিতে সবজি চাষ, খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ, উঁচু প্ল্যাটফর্মে গবাদি পশু পালন এবং দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ।

যুব-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ

যুবসমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নিচের কার্যক্রমগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • বৃক্ষরোপণ ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা।
  • যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নে আয়ের সুযোগ সৃষ্টি।
  • জলবায়ু অভিযোজন সংক্রান্ত স্থানীয় তথ্য সংগ্রহ ও প্রচার করা।

যদি এই উদ্যোগগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হয়, তবে একটি জলবায়ু-স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে, যা টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


Mrinal K. Sarkar is a development professional having more than 18 years of experience performing in the field of climate change adaptation, locally led adaptation with effective engagement of youth. Besides, experience in the field of Water, Sanitation, and Hygiene (WASH) for urban settlement areas along with entrepreneurship development.